
অতনু রায়
মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় সে তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু মেঘের জন্য বৃষ্টি! ঠিক তেমনটাই হচ্ছে ‘মানিকবাবুর মেঘ’-এর জন্য। খোদ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের গলায় প্রশংসার বৃষ্টি এই ছবির টিমের জন্য।
অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফেস্টিভ্যাল’ সফল এই ছবি মুক্তি পেতে চলেছে প্রেক্ষাগৃহে এবং নিবেদনে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, এ খবর ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছেন সবাই। এই ছবির মূল চরিত্রে চন্দন সেন। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া ছবির হিসেবে সাহসী পদক্ষেপ বলছে ইন্ডাস্ট্রি। চন্দন সেনের মত অসামান্য একজন অভিনেতা আজও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাংলা ছবির বাজারে ‘সেলেবল্’ নয়। তো এই ছবি কি ‘বড় নাম-বড় মুখ’ ট্যাবু ভাঙতে পারবে? এই ছবি কি বাংলার প্রযোজকদের, তথাকথিত ফেস ভ্যালুর উর্ধ্বে উঠে চন্দন সেনের মত ‘অভিনেতা’দের মুখ করে ছবি বানানোর উৎসাহ দেবে? এই সব উত্তর জানতে ‘দ্য কাউন্টার কালচার’ যোগাযোগ করেছিল ‘প্রযোজক’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
প্রসেনজিতের গলায় এই ছবির জন্য দরাজ সার্টিফিকেট। বললেন, “আমি জানি ছবিটা সম্পর্কে। খুব ভাল বানিয়েছে ছবিটা। এটা আমারও খুব প্রিয় একটি ছবি। বৌদ্ধায়ন আর ওঁর পুরো টিমকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। একটা সংখ্যক মানুষ যাঁরা ভাল সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন আর বিশ্বাস করেন তাঁদের ভাল লাগবে এই ছবি।”

অনির্বাণ ভট্টাচার্য এই ছবি নিবেদন করছেন বলে ভীষণ খুশি ইন্ডাস্ট্রির ‘বুম্বাদা’। “অনির্বাণ আমার ছোট ভাইয়ের মত। ও আজ একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা-পরিচালক। আমি খুব গর্বিত ওর মত একজন মানুষ এরকম একটা ছবির পাশে দাঁড়িয়েছে বলে। হয়ত ছবিকে এইসব ব্যাপার বিরাট কোনও সাহায্য করে না তবু অনির্বাণ ভট্টাচার্য একটা ছবিকে প্রেজেন্ট করার একটা গুরুত্ব আছেই”, স্নেহ মেশানো গলায় বললেন তিনি।
আরও পড়ুন: অনির্বাণের নিবেদনে আসছে ‘মানিকবাবুর মেঘ’
ছবি প্রেজেন্ট করা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বলেন, “সবাই জানে আমি প্রসূনের ‘দোস্তজী’ ছবিটা খুব আন্তরিকভাবে প্রেজেন্ট করেছিলাম। সেখানে আমার কোনও লেনদেন ছিল না। আমার গর্ব যে সেই ছবি তার নিজের মত করে দর্শকদের মনে জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।” প্রসঙ্গত, নিজের প্রযোজনার বেশ কিছু ছবির নিবেদক তিনি নিজেই।

প্রযোজক প্রসেনজিৎ কি তথাকথিত ‘বড় নাম’ নয় অথচ ভাল অভিনেতাকে পোস্টারের মুখ করে ছবি করবেন? জানতে চাওয়ায় তাঁর সটান জবাব, “আমি একজন প্রযোজক হিসেবে ‘উড়নচণ্ডী’ বানিয়েছি। সেখানে তো সেইভাবে কোনও বড় মুখ বা বড় নাম ছিল না। আমি সাহস করে ‘মহালয়া’র মত ছবি প্রযোজনা করেছিলাম যেখানে শুভাশিস ছিল মুখ। শুভাশিসের কমেডি ইমেজকে সরিয়ে রেখে লাল (সুমন মুখোপাধ্যায়) ‘হারবার্ট’ বানিয়েছে। আর চন্দনও আমার ছোট ভাইয়ের মত। আমি ওঁকে অনেক ছোটবেলা থেকে চিনি। অসামান্য সব অভিনেতা এঁরা। ‘মানিকবাবুর মেঘ’ ছবিতে ওঁর কাজ মানুষ ভালবাসবেন। তাই আমি বলব অবশ্যই এই ধরণের ছবি আরও হওয়া উচিত, দেখাও দরকার। এই ছবির একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শক আছে। এই রকম ছবি যদি বাংলাতে না হয় তাহলে বাংলা সিনেমার যে ঘরানাটা নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনা হয় সেটা হারিয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন: বাংলা ছবির নতুন অধ্যায় ‘দেবী চৌধুরানী’র হাত ধরে
নিজে যখন হার্ডকোর মেইনস্ট্রিম ছবি করেছেন একের পর এক, তখনও সুযোগ পেতেই অন্যধারার ছবি করেছেন মনে করিয়ে প্রসেনজিতের বক্তব্য, “কিছু ছবি থাকে যে ছবিগুলো একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শকের জন্য তৈরি করা হয়। এই ধরণের ছবি বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবে। আমি এটা চিরকাল মাথায় রেখেছি। তাই আমি দু বেলা তথাকথিত মেইনস্ট্রিম ছবির শুটিং করতে করতেই ‘ক্লার্ক’, ‘হাউসফুল’, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘আমি, ইয়াসিন আর আমার মধুবালা’, ‘স্বপ্নের দিন’ করেছি। আবার এখনকার মেইনস্ট্রিম ছবি ‘প্রাক্তন’, ‘অযোগ্য’, ‘কাকাবাবু’ করতে করতে সময় করে ‘শঙ্খচিল’, ‘ময়ূরাক্ষী’ করেছি। আজকে ‘শেষ পাতা’তে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় থাকলেও সেটা কিন্তু অন্য ঘরানারই ছবি। বাঙালিদের কাছে এই ধরণের ছবি সবসময়ই ভীষণভাবে গ্রহণযোগ্য। হয়ত দর্শক তুলনায় কম কিন্তু যাঁদের উদ্দেশ্যে বানানো তাঁরাই যদি ছবি দেখেন তাহলেই আমরা খুশি হব।”